আত্মহত্যা থেকে দূরে রাখবে যেসব আমল
ফাহমিদা সুলতানা, অতিথি লেখিকা:
আত্মহত্যা বর্তমানে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময়ই শোনা যায় নানা পেশার ও স্তরের মানুষ আত্মহত্যা করছে। বিশেষ করে লকডাউন ও করোনা-পরিস্থিতিতে আমরা যত বেশি আত্মহত্যার খবর শুনেছি— এত সম্ভবত অন্য কোনো সময় শুনতে হয়নি। কিছুদিন পরপরই আত্মহত্যার খবর মেলে সংবাদপত্রে।
মূলত ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন কেড়ে নেওয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াই হলো আত্মহত্যা। আরবিতে যাকে বলে ‘ইনতিহার’। দেখা গেছে, মানুষ নানা কারণে আত্মহত্যা করলেও এর অন্যতম কারণগুলো হলো- মানসিক হতাশা ও বিষণ্ণতা, দাম্পত্যজীবনে কলহ কিংবা যেকোনো সম্পর্কে অনৈক্য, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতনতা, পারিপার্শ্বিক অসহযোগিতা এবং সার্বিক বিদ্রুপ ও বিভিন্ন রকম যন্ত্রণা।
আত্মহত্যার চিন্তা থেকে বাঁচতে যে আমল করবেন
ইসলাম মানুষকে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সুউচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করেছে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের প্রাণের মূল্য অনেক বেশি। ইসলামে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করার প্রতি বারবার উৎসাহিত করা হয়েছে। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করতে বলা হয়েছে।
ইসলামে অন্যকে হত্যা করা যেমন মারাত্মক কবিরা গুনাহ, তেমনি আত্মহত্যা করাও কবিরা গুনাহ। আত্মহত্যা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
আত্মহত্যা কখনো সমাধান নয়
হতাশ হলে আশা ছাড়তে নেই : মানুষ সাধারণত হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করে। ইসলামে হতাশ হতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা জুমার, আয়াত ৫৩)
বিপদে পড়লে যা করবেন : আবার অনেক সময় মানুষ বিপদে পড়ে কোনো উপায়ন্তর নেই মনে করে আত্মহত্যা করে। ইসলাম মানুষকে বলে, আল্লাহ তাআলা বিপদাপদ দেন মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। সুতরাং, বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বিপদ যত বেশিই হোক তা একসময় দূরীভূত হবেই। সুতরাং আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫)
অভাবে অসহ্য হলে আত্মহত্যা নয় : কখনো অভাব-অনটনে জর্জরিত হয়ে মানুষ আত্মহত্যা করে। ইসলাম ধনীদের নির্দেশ দিয়েছে অভাবীদের অভাব মোচনে এগিয়ে আসার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের অধিকার রয়েছে (সুরা আজ-জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
ব্যর্থ হলেও জীবন শেষ নয় : কখনো মানুষ পার্থিব ব্যর্থতা মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করে। ইসলাম বলে পার্থিব ব্যর্থতা কোনো ব্যর্থতাই নয়। সাফল্য ও ব্যর্থতার স্থান হলো আখিরাত। পার্থিব জগতে কোনো কিছু অর্জিত না হলে সেজন্য জীবননাশ করা নিরেট বোকামি। এ জীবন অতি তুচ্ছ। আখিরাতের জীবনই আসল জীবন। আল্লাহ বলেন, ‘এ দুনিয়ার জীবন তো ক্ষণস্থায়ী উপভোগের বস্তু। নিঃসন্দেহে আখিরাতই চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ৩৯)
প্রেমের কারণে আত্মহুতি কেন? : অনেক সময় কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীরা প্রেমঘটিত বিষয়ের কারণে আত্মহত্যা করে। ইসলামে বিয়ে পূর্ববর্তী প্রেম সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামে প্রেম তো দূরের কথা গায়েরে মুহাররাম নারী-পুরুষ পরস্পরের দিকে দৃষ্টিপাতই নিষেধ।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তার লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩০-৩১)।
ইসলামে বৈধ ও পবিত্র সম্পর্ক হলো বিয়ে। ইসলাম বিয়ে-বহির্ভুত প্রেমের অনুমতি দেয় না, তবে পছন্দ করে শরিয়তসম্মতভাবে বিয়ে করার অনুমতি দেয়।
অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা : অনেক সময় মানুষ অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অন্যকে অপমান করার অধিকার ইসলাম কাউকে দেয়নি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমাদের কোনো সম্প্রদায় যেন অপর সম্প্রদায়কে ঠাট্টা-বিদ্রুপ না করে।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১১)
সর্বোপরি, ইসলামে আত্মহত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করার কোনো সুযোগ নেই। আর ইসলাম আত্মহত্যায় ইচ্ছুকদের ধৈর্য ধারণ করতে উৎসাহিত করে। তাদের মানসিক ও আর্থিক সহযোগিতার পরামর্শ দেয়। আত্মহত্যা থেকে বিরত থাকায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More