কীভাবে বুঝব আল্লাহ আমার ওপর অসন্তুষ্ট
জাওয়াদ তাহের:
মহান আল্লাহ তাআলা সুন্দর অবয়বে মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
’ (সুরা ত্বিন, আয়াত : ৪)
বান্দার ওপর তার সৃষ্টিকর্তা যদি অসন্তোষ থাকেন, তাহলে তার ক্ষতি অনিবার্য। একজন মানুষ কীভাবে অনুভব করবে যে তার প্রভু তার প্রতি অসন্তুষ্ট। কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে এ কথা বলা যাবে না যে আল্লাহ তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট, অথবা আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন না। কারণ এ ব্যাপারে প্রকৃত ইলম (জ্ঞান) একমাত্র আল্লাহর। তবে কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু নিদর্শন এসেছে, যার দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট।
নির্দয় হওয়া : অন্তর কঠোর হওয়া ও মানুষের প্রতি নির্দয় হওয়া। আপনজনের সঙ্গে মন্দ আচরণ করা। আর আল্লাহ যখন কোনো বান্দার ওপর রাগান্বিত হন, তখন তার দিল থেকে দয়া উঠিয়ে নেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, হে আয়েশা, তুমি কখন আমাকে অশালীন দেখেছ? কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিক দিয়ে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার অনিষ্টের কারণে মানুষ তাকে ত্যাগ করে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৩২)
বরকত উঠিয়ে নেন : আল্লাহ তাআলা যখন কারো প্রতি অসন্তুষ্ট হন তখন তার জীবন থেকে বরকত উঠিয়ে নেন এবং তার ওপর বিভিন্ন ধরনের শত্রু নিয়োজিত করে দেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারো প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচণ্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূ-গর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জিত। আল্লাহ তাদের প্রতি জুলুম করার ছিলেন না; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে। ’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪০)
যেকোনো মুসিবতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা : আল্লাহ যখন বান্দাকে পরীক্ষা কিংবা অন্য কোনো কারণে বিপদাপদ দেন; তখন তাঁর প্রতি বিরক্তি ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা আল্লাহ তাআলাকে ক্রোধান্বিত করে তোলে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদের (বিপদে ফেলে) পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহ তাআলার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে ব্যক্তি তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহ তাআলার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৬)
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা না করা : আল্লাহ তাআলা চান তাঁর বান্দা তাঁর কাছে প্রার্থনা করে। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশে আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। ’ (সুরা গাফির, আয়াত : ৬০)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে যে ব্যক্তি প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তাআলা তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৩)
অহংকারী হওয়া, সত্যকে গোপন করা : অন্যকে ছোট করার মানসিকতা থাকা, মানুষের মধ্যে প্রসিদ্ধিলাভ করার প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা থাকা। যার ফলে সে ভালো কাজ করে লোক দেখানো ও খ্যাতি লাভের জন্য। তার চাওয়া-পাওয়া একমাত্র তার প্রবৃত্তিকে পূরণ করা। তার প্রবৃত্তি তার প্রভু হয়ে যায়। পরকাল থেকে সম্পূর্ণ থাকে সে উদাসীন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ২৩)
নিয়ামত অস্বীকার করা : প্রতিটি বান্দার ওপর দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা আল্লাহ তাআলার হাজারো নিয়ামত বর্ষিত হচ্ছে। কিন্তু যারা অকৃতজ্ঞ তারা আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামত পেয়েও তা অস্বীকার করে। আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা অস্বীকার করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের থেকে বেপরওয়া। তিনি তাঁর বান্দাদের কাফির হয়ে পড়া পছন্দ করেন না। পক্ষান্তরে যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও, তবে তিনি তোমাদের জন্য তা পছন্দ করেন। ’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৭)
খিয়ানত করা : কথা ও কাজে যখন আপনি খিয়ানত করবেন তখন বুঝবেন যে আল্লাহ তাআলা আপনার ওপর অসন্তুষ্ট। তাই আপনি আপনার জীবনে খেয়ানত করেই চলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা নিজেদের সঙ্গেই খিয়ানত করে তুমি তাদের পক্ষে বিতর্ক কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো খিয়ানতকারী ও পাপীষ্ঠকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১০৭)
সীমা লঙ্ঘন করা : যেকোনো কাজে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। কোনো ক্ষেত্রে প্রান্তিকতা না করা। বাড়াবাড়িও করবে না, আবার শিথিলতা করবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো; কিন্তু সীমা লঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯০)
ইহুদি, খ্রিস্টান সম্প্রদায় তারা বিভিন্ন কাজে সীমা লঙ্ঘন করেছিল। এ জন্য আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা আমলে মধ্যপন্থা অবলম্বন কোরো, বাড়াবাড়ি কোরো না। সকাল-সন্ধ্যায় (ইবাদতের জন্য) বের হয়ে পড়ো এবং রাতের কিছু অংশেও। তোমরা অবশ্যই পরিমিতি রক্ষা কোরো। তাহলে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৬৩)
Related News
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক?
মজার ছলে কাউকে গালি দেওয়া কি ঠিক? আড্ডার সময়ে বন্ধুরা একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনেরRead More
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী
যৌবনকালের ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে যা বললেন আজহারী যৌবনকালের ইবাদত একটি লাভজনক ইনভেস্টমেন্ট বলে মন্তব্য করেছেনRead More