Main Menu

নামাজের জন্য কেমন পোশাক হওয়া জরুরি

ইসলাম ডেস্ক:
ইসলামের প্রধান ইবাদত নামাজ। ঈমানের পরই নামাজের স্থান। নামাজে মুমিন মুসলমানের পোশাক কেমন হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?

নামাজের ভেতরে পোশাক পরিচ্ছদ কেমন হবে তা নিয়ে হাদিসের অনেক বর্ণনা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক কাপড়েও নামাজ পড়েছেন। তবে এক কাপড়ে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে কাঁধ ঢাকা থাকতে হবে। হাদিসে এসেছে-

১. হজরত ওমার ইবনু আবু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক কাপড়ে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হজরত উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে কাপড়টি নিজের শরীরে এভাবে জড়িয়ে নিলেন যে, কাপড়ের দুই দিক তাঁর কাঁধের উপর ছিল।’ (বুখারি ও মুসলিম, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে খুজাইমা, ইবনে হিব্বান)

নামাজের সময় কাঁধের উপর কাপড় রাখা প্রসঙ্গে প্রিয় নবির নির্দেশনা ছিল এমন-

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজে কাপড়ের কোনো অংশ কাঁধের উপর না রেখে তোমাদের কেউ যেন এক কাপড়ে নামাজ আদায় না করে।’ (বুখারি ও মুসলিম, নাসাঈ, দারেমি, বায়হাকি)

৩. অন্য বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এক কাপড়ে নামাজ আদায় করবে সে যেন কাপড়ের দুইকোণ কাঁধের উপর দিয়ে বিপরীত দিক থেকে টেনে এনে জড়িয়ে নেয়।’ (বুখারি, ইবনু হিব্বান)

এক কাপড়ে নামাজ পড়ার (ইবাদতের) ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন লজ্জাস্থান প্রকাশ পেয়ে না যায়। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ মেশকাতুল মাসাবিহ-এর পোশাক-পরিচ্ছদ অধ্যায়ে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কথা বলা হয়েছে-

৪. হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো ব্যক্তিকে নিষেধ করেছেন- তার বাম হাতে খেতে; একখানা জুতা পরে চলাফেরা করতে; ইশতিমালে সম্মা অবস্থায় চাদর পরতে এবং লজ্জাস্থান উন্মুক্ত রেখে একই কাপড়ে ইজত্বিবা করতে।’ (মুসলিম, ইবনে হিব্বান, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

উল্লেখ্য তওয়াফে কুদুম (ওমরা ও হজের সর্বপ্রথম তওয়াফ) ছাড়া অন্য সময় ইহরাম অবস্থায় ডান কাঁধ বের করে রাখা বিধেয় নয়। বরং নামাজের সময় উভয় কাঁধ ঢাকা জরুরি।

একাধিক কাপড় পরা যাবে কি?

এক ব্যক্তি হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এক কাপড়ে নামাজ পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘আল্লাহ আধিক্য দান করলে তোমরাও অধিক ব্যবহার কর।’ অর্থাৎ বেশি কাপড় থাকলে বেশি ব্যবহার করাই উত্তম।’ (বুখারি)

নামাজের অনুভূতি

বান্দা নামাজে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়। আল্লাহ তাআলা সৌন্দর্য পছন্দ করেন। তাই নামাজির উচিৎ, যথাসাধ্য সৌন্দর্য অবলম্বন করে উত্তম পোশাক পরে তাঁর দরবারে হাজিরা দেওয়া। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজ পড়ে, তখন তাকে দুইটি কাপড় পরা উচিৎ। কারণ, আল্লাহ বেশি অধিকার রাখে যে, তাঁর জন্য সাজসজ্জা গ্রহণ করা হবে।’ (জামে)

যে পোশাক থেকে সাবধান থাকতে হবে

পক্ষান্তরে নামাজের জন্য এমন ডিজাইন বা নকশার কাপড় পরা উচিৎ নয়, যাতে নামাজির মন বা একাগ্রতা ছুটে যায়। হাদিসের বর্ণনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট।

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি চাদর পরে নামাজ আদায় করলেন। চাদরটির এক কোণে অন্য রঙের বুটির মতো কিছু কাজ করা ছিল। নামাজে এই কারুকার্যের দিকে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার তাকালেন। নামাজ শেষ করার পর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমার এ চাদরটি (এর দানকারী) আবু জাহমার কাছে নিয়ে যাও। তাকে এটি ফেরত দিয়ে আমার জন্য তার ‘আম্বিজা-নিয়াহ্’ (নকশাবিহীন) চাদর নিয়ে আসো। কারণ এই চাদরটি আমাকে আমার নামাজে মনোযোগী হতে বিরত রেখেছে।’ (বুখারি ও মুসলিম, মিশকাত)

২. বুখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি নামাজে চাদরের কারুকার্যের দিকে তাকাচ্ছিলাম, তাই আমার ভয় হচ্ছে এই চাদর নামাজে আমার একাগ্রতা বিনষ্ট করতে পারে।’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

নামাজির কাপড় এমন হওয়াও উচিত নয়, যাতে কোনো বিচরণশীল প্রাণীর ছবি থাকে। কারণ এতেও নামাজির মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-

৩. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কক্ষের এক কোনে একটি ছবিযুক্ত রঙিন পর্দা টাঙ্গানো ছিল। একদিন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার এই পর্দা আমাদের কাছ থেকে সরিয়ে নাও। কারণ, ওর ছবিগুলো আমার নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে।’ (বুখারি)

৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘যে ঘরে কুকুর অথবা ছবি (বা মূর্তি) থাকে, সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি, ইবনে হিব্বান)

আবার যে কাপড়ে অমুসলিমদের কোনো ধর্মীয় প্রতীক (যেমন ক্রুশ, শঙ্খ প্রভৃতি) থাকে, সে কাপড় (ও অলঙ্কার) ব্যবহার বৈধ নয়। হাদিসে পাকে এসেছে-

৫. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়িতে কোনো জিনিসে ক্রুশ দেখলেই তা কেটে ফেলতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ)

শুধু নামাজের ক্ষেত্রেই নয়, নামাজের বাইরেও এ ধরনের ছবিযুক্ত লেবাস মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ, ইসলাম ছবি ও মূর্তির বৈধ নয়।

৬. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্রাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজে তার লুঙ্গিকে অহংকারের সঙ্গে গাঁটের নিচে ঝুলিয়ে রাখে, তার এ কাজ হালাল নয় এবং আল্লাহর কাছে তার কোনো সম্মান নেই।’ (আবু দাউদ)

বিশেষ করে

টাইট-ফিট প্যান্ট ও শার্ট এবং শরীরের সঙ্গে লেগে থাকা কাপড় পড়ে নামাজ পড়া উচিত নয়। টাইট হওয়ার কারণে নামাজে একাগ্রতা ভঙ্গ হয়। তাছাড়া কাপড়ের উপর থেকে (বিশেষ করে পিছন থেকে) লজ্জাস্থানের উঁচু-নীচু অংশ ও আকার বোঝা যায়। অনেকে এভাবে নামাজ পড়াকে মাকরূহ বলেছেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, উত্তম পোশাকে নামাজ পড়া। হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণে আমল করা। নামাজের পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন পোশাকের বিষয়ে সতর্ক থাকা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উত্তম পোশাকে প্রয়োজনীয় কাপড় পরে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।






Related News

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *